মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩০ অপরাহ্ন
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভোলার ১২০টি ইট ভাটার প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। টানা বর্ষণ ও ঝড়ে ইট ভাটায় পোড়ানোর জন্য রাখা কাঁচা ইট এখন মাটির স্তুপে পরিণত হয়েছে।
মাত্র কয়েকদিন আগেও এ ইট ভাটাগুলোতে সারি সারি কাঁচা ইট সাজানো ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সব ইট ভিজে মাটির স্তুপে পরিণত হয়েছে। এতে করে ইট পোড়ানোর আগেই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ইট ব্যবসায়ীদের। ফলে এ ইট ভাটাগুলোর নতুন ইট উৎপাদন দু’মাস পিছিয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে এ ক্ষতির প্রভাব পড়বে ইটের দামের ওপর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোলার সাতটি উপজেলায় ১২০টি ইট ভাটা রয়েছে। সব ইট ভাটায় চলছিল নতুন ইট তৈরির কাজ। এগুলো চলতি মাসের শেষের দিকে পোড়ানো শুরু করার কথা ছিল। মৌসুমের শুরুতেই ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত রাখা সব কাঁচা ইট বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
বুধবার ভোলার বিভিন্ন ইটভাটা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটাগুলোতে শ্রমিকরা ভিজে মাটিতে পরিণত হওয়া স্তুপগুলো সরানোর কাজ করছে। কোনো কোনো ইট ভাটায় এখনও শ্রমকিরা কাজ শুরু করেনি। ঝড়ের কারণে গত এক সপ্তাহ বসে থেকে শ্রমিকরা বাড়িতে চলে গেছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে তাদের আরও এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যাবে। পোড়ানোর জন্য সারি সারি সাজিয়ে রাখা কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে কাদায় পরিণত হয়েছে। কিছু ইট পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হলেও শেষ পর্যন্ত বুলবুল’র প্রভাব থেকে শেষ রক্ষা হয়নি।
মায়ের দোয়া ও সাবাব ব্রিক্সের মালিক আমির হোসেন বলেন, ঝড়ে তার দুইটি ফিল্ডের ১৩ লক্ষ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এবং ইট পোড়ানোর জন্য আনা মজুদকৃত কয়লা জোয়ারের পানিতে নদীতে চলে গেছে। এতে আমার দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ইলিশা ব্রিক্সের মালিক মাকসুদুর রহমান জানান, ঝড়ের আঘাতে তার ফিল্ডের প্রায় ১০ লাখ কাচা ইট পাটিতে পরিণত হয়েছে। এতে তার অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তার দুই বছর ইট পোড়ানো লাগবে।
ভোলা সদর উপজেলার রূপালী ব্রিক্স ও সুরামা ব্রিক্সের মালিক মো. নুরুল ইসলাম মিয়া বলেন, তার দুইটি ইট ভাটায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। তার দুইটি ইট ভাটায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ কাঁচা ইট পটির সঙ্গে মিশে গেছে।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একতা ও ফ্রেন্ডস ব্রিক্সের মালিক তরিকুল ইসলাম কায়েদ জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ভোলার প্রায় ১২৫টি ইট ভাটার সবগুলোই ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। যার আথিক পরিমাণ শত কোটি টাকা। তার নিজের দুটি ফিল্ডে প্রায় ১০ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য চলতি অর্থ বছরে ইটভাটা মালিকদের আয়কর মওকুফের দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকার যদি এ সব ইট ভাটার মালিকদের আর্থিক সহায়তা, সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ দেয়া ও পূর্বের ঋণের সুদ মওকুফ না করে তাহলে তারা পথে বসে যাবে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ইট ভাটার মালিকরা যদি তাদের ক্ষতি নিরুপণ করে আমাদের কাছে আবেদন করে। তাহলে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরব। যাতে করে তারা সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণসহ আর্থিক সহায়তা পেতে পারে।
এস এস